আপেলের উপকারিতা অপকারিতা এবং আপেল খাওয়ার নিয়ম

আপনি কি আপেলের উপকারিতা অপকারিতা সম্পর্কে জানতে চান। তাহলে আজকের আর্টিকেলটি আপনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আজকে আর্টিকেলের মাধ্যমে খুব সহজে জানতে পারবেন আপেল খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে। 
তাই আর্টিকেটে ধর্য্য সহকারে পড়ুন তাহলে জানতে পারবেন আপেলের উপকারিত ও অপকারিতা সম্পর্কে।তাহলে চলুন আর দেরি না করে আপেল খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা, আপেল খাওয়ার সঠিক নিয়ম, আপেল খেলে কি হয় বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে আসি।  

পেজ সূচিপত্র : আপেলের উপকারিতা অপকারিতা এবং আপেল খাওয়ার নিয়ম

আপেলের উপকারিতা অপকারিতা এবং আপেল খাওয়ার সঠিক নিয়ম 

আপেল এমন একটি ফল যেটাতে প্রায় সকল ধরনের পুষ্টিগুণ থাকে। আপেল অনেক মিষ্টি জাতীয় একটি ফল। বিশ্বের প্রায় সব দেশে আপেলের চাষ করা হয়ে থাকে। সবথেকে বেশি চাষ করা হয় জেনাস ম্যলুস প্রজাতিতে। আপেল প্রায় সব রীতিতে পাওয়া যায়। প্রাচীনকাল থেকে আপেলের ইংরেজি প্রচলন ছিল এইপল।
কালের বিবর্তনে ধীরে ধীরে এই ফল থেকে আপেলের রূপান্তরিত হয়েছে। আপেলের বৈজ্ঞানিক নাম "মেলাস ডোমেস্টিকা "। আপেল আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী একটি ফল। আপেল কখন খাওয়া উচিত, কখন খাওয়া উচিত না এসব জেনে খাওয়া ভালো। আপেলে রয়েছে ফাইবার যা আমাদের হজম প্রক্রিয়াকে সাহায্য করে।

ডাক্তারদের মতে দৈনন্দিন খাবারে তালিকা আপেল রাখা জরুরী। বাংলাদেশ আপেল গাছ খুব একটা দেখা যায় না। ভারতের কাশ্মীরে আপেল ভালো পাওয়া যায়। বাংলাদেশের পিরোজপুর এবং সিরাজগঞ্জে আপেল গাছ এবং চারা পাওয়া যায়। বাংলাদেশের আপেল গাছ খুব ভালো না জন্মালেও বাংলাদেশ আপেল খুব একটি জনপ্রিয় ফল হিসেবে পরিচিত। 

আপেল খাওয়ার উপকারিতা 

আপেল খাওয়া স্বাস্থ্যকর এবং পুষ্টিকর অভ্যাস হিসেবে পরিচিত। এতে প্রচুর ভিটামিন, খনিজ এবং ফাইবার থাকে যা আমাদের শরীরের জন্য বিভিন্নভাবে উপকারী।প্রথমত, আপেলে প্রচুর ফাইবার রয়েছে যা হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে। আপেলের ফাইবার আমাদের অন্ত্রে ভালো ব্যাকটেরিয়া তৈরি করতে সাহায্য করে, যা হজম ক্ষমতা বাড়ায় এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। এটি আমাদের রক্তে সরকারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে, ফলের ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়।
দ্বিতীয়ত, আপেল হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। আপেলের মধ্যে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ফ্ল্যাভোনয়েড এবং পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে, যা হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়। এছাড়া আপেলের ফাইবার খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে সহায়ক ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস পায়। তৃতীয়ত, আপেল দাঁতের স্বাস্থ্য রক্ষা করে। আপেল চিবানোর সময় মুখে লালা উৎপাদন বৃদ্ধি পায় যা ব্যাকটেরিয়া দূর করে এবং দাঁতের ক্ষয় প্রতিরোধ করে। 

এছাড়া আপেলের ভিটামিন সি এবং অন্যান্য অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এটি ত্বকের সুস্থতা বজায় রাখতে ও সাহায্য করে। আপেলে ক্যালরি কম থাকায় এটি ওজন নিয়ন্ত্রণের সহায়ক, ফলে ওজন কমাতে চাওয়া ব্যক্তিদের জন্য এটি উপকারী। সব মিলিয়ে, আপেল খাওয়া দৈনন্দিন খাদ্যভ্যাসের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হতে পারে যা আমাদের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। প্রতিদিন একটি আপেল খেলে ডাক্তার দূরে থাকে এ প্রবাদটি যথার্থই প্রমাণিত। 

আপেল খাওয়ার অপকারিতা 

আপেল একটি পুষ্টিকর ফল হিসেবে পরিচিত, তবে অতিরিক্ত পরিমাণে আপেল খাওয়ার কিছু অপকারিতা রয়েছে। আপেলে প্রাকৃতিকভাবে ফ্রুক্টোজ(এক ধরনের চিনি) থাকে যা, অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে রক্তে শর্করা পরিমাণ বাড়াতে পারে, বিশেষ করে ডায়াবেটিক্স রোগীদের ক্ষেত্রে এটি  ক্ষতিকর হতে পারে। অতিরিক্ত ফ্রুক্টোজ হজমের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে এবং পেট ফাঁপার মতো সমস্যার কারণ হতে পারে। 

আপেলের বীজে সায়ানোজেনিক গ্লাইকোসাইট নামক একটি বিষাক্ত পদার্থ থাকে, যা অত্যন্ত পরিমাণে খাওয়া হলে বিষক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। যদিও একটি বা দুটি বিষ খেলে কোন ক্ষতি হয় না, তবে নিয়মিত আপেলের বীজ খাওয়া এড়িয়ে চলা উচিত। অতিরিক্ত আপেল খাওয়া দাঁতের ক্ষয়ের ভূমিকা রাখতে পারে, কারণ আপেলের প্রাকৃতিক অ্যাসিড দাঁতের এনামেল ক্ষয় করতে পারে। 

যারা নিয়মিত আপেল খান তাদের উচিত দাঁত পরিষ্কার রাখার দিকে নজর দেওয়া। তাছাড়া, বাজারে পাওয়া পেলে কীটনাশক ও রাসায়নিক পদার্থের উপস্থিতি থাকতে পারে যার শরীরে জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তাই আপেল ভালোভাবে ধুয়ে বা খোসা ছাড়িয়ে হাওয়ায় উত্তম। 

আপেলের পুষ্টিগুণ : প্রতি ১০০ গ্রামে আপেলে রয়েছে 

শর্করা ১৩.৮১ গ্রাম 
আমি ০.২৬ গ্রাম 
খাদ্য শক্তি ৫২ কিলো ক্যালরি 
ফাইবার ২.৪ গ্রাম 
জিংক ০.০৪ মিলিগ্রাম 
ম্যাগনেসিয়াম ৫ মিলিগ্রাম 
চর্বি ০.১৭ গ্রাম 
লৌহ ০.১২ মিলিগ্রাম 
সোডিয়াম ১ মিলিগ্রাম 
পটাশিয়াম ১০৭ মিলিগ্রাম 
ক্যালসিয়াম ৬ মিলিগ্রাম 
ফসফরাস ১১ মিলিগ্রাম 
কোলেস্টেরল ০ মিলিগ্রাম 
ভিটামিন এ ৫ আইইউ 
ভিটামিন সি ৪.৬ মিলিগ্রাম 
ভিটামিন ই ০.১৮ মিলিগ্রাম 

আপেলের পুষ্টি উপাদানসমূহ :

আমিষ 
শর্করা 
খাদ্য শক্তি 
ফাইবার 
ভিটামিন এ 
ভিটামিন সি 
ভিটামিন ই 
চর্বি 
পটাশিয়াম 
ক্যালসিয়াম 
ম্যাগনেসিয়াম 
সোডিয়াম 
জিংক 
লৌহ 
কোলেস্টেরল 
ফসফরাস 

গর্ভাবস্থায় আপেল খাওয়ার উপকারিতা :

গর্ভাবস্থায় আপেল খাওয়া মা ও শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারী। আপেলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ফাইবার এবং প্রয়োজনে খনিজ উপাদান থাকে যা গর্ভবতী নারীর জন্য বিশেষভাবে উপযোগী। 

  • পুষ্টি সরবরাহ : আপেলে প্রচুর ভিটামিন সি থাকে, যার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং শরীরে কোষগুলিকে সুরক্ষা দেয়। এটি আয়রনের শোষণ বাড়াতে সাহায্য করে যা শিশুর জন্য জরুরী রক্ত উৎপাদনের সহায়ক। 
  • ফাইবারের উৎস : আপেলে থাকা ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্য রোধে সহায়ক। 
  • অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট : আপেলের মধ্যে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ফ্রি রেডিক্যাল থেকে সুরক্ষা দেয় যা কোষের ক্ষতি প্রতিরোধ করে। 
  • ওজন নিয়ন্ত্রণ : আপেল কম ক্যালোরি ফল যা গর্ভাবস্থায় ওজন নিয়ন্ত্রণ রাখতে সহায়ক হতে পারে। 
  • শিশুর ফুসফুসের উন্নতি : গবেষণায় দেখা গেছে, গর্ভাবস্থায় নিয়মিত আপেল খাওয়া শিশুর ফুসফুসের কার্যকারিতা উন্নত করতে সহায়ক এবং অ্যাজমা হওয়ার সম্ভাবনা কমায়। 

আপেল খাওয়ার সঠিক নিয়ম :

আপেল খাওয়ার সঠিক সম্পর্কে বেশ কিছু মতামত রয়েছে, তবে বেশিরভাগ পুষ্টিবিদ এবং স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, সকালে আপেল খাওয়া সবচেয়ে উপকারী। না পেলে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার এবং প্রাকৃতিক শর্করা থাকে যা শরীফের দিনের শুরুতে শক্তি যোগায়। এতে থাকা ফাইভার হজম শক্তি উন্নত করে এবং মেটাবলিজম বাড়ায়। তাই সকালে আপেল খেলে তা দীর্ঘ সময় ধরে পেট ভরা রাখে এবং শরীরের স্থূলতা কমাতে সাহায্য করে। 

সকালের খাবার অংশ হিসেবে আপেল খেলে, রক্তের শর্করার মাত্রায স্থিতিশীল  থাকে এবং মস্তিষ্ককে সক্রিয় রাখে। তাছাড়া রাতে আপেল খাওয়ার ফলে এতে থাকা ফ্রুক্টোজ কিছু ক্ষেত্রে গ্যাস্ট্রিক সমস্যার কারণ হতে পারে। ফলে ঘর থেকে বিরত থাকাই ভালো। তবে দিনের যেকোনো সময় আপেল খাওয়া যেতে পারে কারণ এটি একটি স্বাস্থ্যকর ফল। সঠিক সময়ে খেলে এর পুষ্টিগুণ বেশি উপকারে আসে। 

সবুজ আপেলের উপকারিতা 

সবুজ আপেল (Granny Smith) স্বাস্থ্যকর ফল হিসেবে পরিচিত যার অনেক পুষ্টিগুণ রয়েছে। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, ফাইবার, এবং এন্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক। 

  • ওজন কমাতে সাহায্য করে : সবুজ আপেলে ক্যালোরি কম এবং ফাইবার বেশি থাকে যা দীর্ঘ সময় ধরে পেট ভরা রাখে। এটি অতিরিক্ত খাবারের প্রবণতা কমিয়ে ওজন নিয়ন্ত্রণের সহায়তা করে। 
  • হৃদরোগ প্রতিরোধ সহায়ক : সবুজ আপেলের মধ্যে ঢাকা ফাইবার রক্তের কোলেস্টেরল কমায় যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে। 
  • হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে : এতে থাকা ফাইবার হজম প্রক্রিয়াকে সহজ করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যার সমাধানের সাহায্য করে। 
  • ত্বকের স্বাস্থ্য বজায় রাখে : ভিটামিন সি ত্বকের জন্য খুবই উপকারী। এটি কোলাজেন উৎপাদন বাড়িয়ে তোকে উজ্জ্বল ও স্বাস্থ্যকর রাখে। 
  • রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ : সবুজ আপেল কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্স যুক্ত হওয়ার রক্তে সরকারের স্তর নিয়ন্ত্রণ রাখতে সহায়ক। 

আপেলের বিচি খেলে কি হয় :

আপেলের বিচি সাধারণত ক্ষতিকর মনে করা হয় কারণ এটি একটি যৌগ থাকে যাকে বলা হয় অ্যামিগডালিন।অ্যামিগডালিন শরীরে সায়ানাইড উৎপন্ন করতে পারে যা একটি বিষাক্ত পদার্থ। ছোট পরিমান আপেলের বিচি খাওয়া বিপদজনক নয় কারণ মানবদেহে এই পরিমাণের  সায়ানাইড সহজে প্রসেস করতে সক্ষম। তবে আপেলের বিচিগুলো চিবিয়ে খাওয়া হলে বেশি  অ্যামিগডালিন নির্গত হতে পারে যা কিছুটা ঝুঁকির কারণ হতে পারে। 

প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য আপেলের এক বা দুইটি বিচি সাধারণত ক্ষতিকর নয়, কারণ শরীর এটিকে প্রাকৃতিকভাবে নিরাপদ করতে পারে। তবে যদি কেউ প্রচুর পরিমাণে বিচি চিবিয়ে খায় তাহলে সায়ানাইড বিষক্রিয়া হতে পারে। এর লক্ষণগুলো হতে পারে মাথা ব্যাথা, বমি, পেট ব্যথা, মাথা ঘোরা, এবং গুরুতর ক্ষেত্রে শ্বাসকষ্ট। 

যদি অসাধারনত আপেলের বিচি খাওয়ার পরিমাণ ক্ষতিকর মাত্রায় পৌঁছায় না, তবুও নিরাপদ থাকার জন্য আপেলের বিচি খাওয়া এড়িয়ে চলাই ভালো। বিশেষ করে ছোট বাচ্চাদের ক্ষেত্রে এই ঝুঁকি বেশি হতে পারে।

আপেল কত টাকা কেজি ২০২৪ 

বর্তমানে সব জিনিসের দাম বাড়ার পাশাপাশি ফলের দাম ও ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। আপেল কত টাকা কেজি বর্তমান অনেকেই জানতে চান। স্থানভেদে এবং আপেলে প্রকারভেদ অনুযায়ী এর দাম কম বেশি হতে পারে। আপেল ৩২০ টাকা কেজি। সূত্র : কালের কন্ঠ। 

শেষ কথা : আপেলের উপকারিতা অপকারিতা এবং আপেল খাওয়ার নিয়ম 

আজকে আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনাদের সহজ ভাবে আপেলের উপকারিতা অপকারিতা তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আপেল খাওয়ার নিয়ম, আপেলের পুষ্টিগুণ, আপেলের বিচি খেলে কি হয় ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিস্তারিত সংক্ষিপ্তভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। তাই আর্টিকেলটি যদি আপনার কাছে ভালো লেগে থাকে অন্যকে দেখার সুযোগ করে দিবেন। 

এতক্ষণ আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। বিভিন্ন ধরনের গুরুত্বপূর্ণ এবং এরকম আর্টিকেল যদি আরো পড়তে চান তাহলে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইট ফলো করুন। আমরা আমাদের ওয়েবসাইটে নিয়মিত এ ধরনের আর্টিকেল প্রকাশ করি। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

জানার উপায় ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন।প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url