জলপাই খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা-জলপাইয়ের পুষ্টিগুণ

আপনি কি জলপাই খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন? তাহলে আজকের আর্টিকেলটি আপনার জন্যই। আর্টিকেলটিতে বিস্তারিত সবকিছু আলোচনা করা হয়েছে। আপনার স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য প্রতিদিন জলপাই খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন। জলপাই টক জাতীয় ফল যা আপনার স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। 
জলপাই-খাওয়ার-উপকারিতা-ও-অপকারিতা

নিচে আরো আলোচনা করা হবে: জলপাই খাওয়ার নিয়ম, জলপাইয়ের মধ্যে থাকা পুষ্টিগুণ, জলপাইয়ের আচারের উপকারিতা, কাঁচা জলপাই এর পুষ্টিগুণ, গর্ভাবস্থায় জলপায় খাওয়ার উপকারিতা, সিদ্ধ জলপাইয় খাওয়ার উপকারিতা ইত্যাদি বিষয়ে। 

পেজ সূচিপত্র ঃ জলপাই খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা-জলপাইয়ের পুষ্টিগুণ

জলপাই খাওয়ার উপকারিতা 

জলপাই খাওয়ার অনেক উপকারিতা রয়েছে। এটি একটি স্বাস্থ্যকর ফল যা শরীরের বিভিন্ন উপকারে আসে। জলপাইয়ের ভিটামিন, খনিজ, ফাইবার এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যার শরীরকে সুস্থ রাখতে সহায়ক। চলুন জলপাই খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে জানি:
১। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর উৎস
জলপাই এন্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ একটি ফল। এতে পাওয়া যায় ওলিউরোপেনই, হাইড্রোক্সিটাইরোসল এবং টাইরোসল নামে শক্তিশালী এন্টিঅক্সিডেন্ট। এ উপাদান গুলো শরীরের কোষ কে রক্ষা করে এবং অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমাতে সহায়তা করে। অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমলে  হৃদরোগ, ক্যান্সার অন্যান্য দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি কমে। 

২। হৃদযন্ত্রের সুরক্ষা
জল পায়ে থাকা স্বাস্থ্যকর মনোআনস্যাসুরেটেড ফ্যাট হৃদযন্ত্রের জন্য উপকারী। এ ফ্যাট শরীরে এলডিএল বা খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায় এইচডিএল বা ভালো করে শরীরের মাত্রা বাড়ায়, যা হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নিয়মিত জলপাই খেলে হার্ট অ্যাটাক ও স্টকে ঝুঁকি হ্রাস পায়। 

৩। অস্থির জন্য ভালো
জলপাইয়ের মধ্যে পাওয়া যায় ক্যালসিয়াম, ভিটামিন কে, যা স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে। এছাড়া এতে থাকা পলিফেনাল উপাদান অস্থির ঘনত্ব বাড়াতে সাহায্য করে, ফলে হার শক্তিশালী হয় এবং অস্টিওপোরোসিসের মত হাড়ের রোগ প্রতিরোধ করতে সহায়ক। 

৪। প্রদাহ হ্রাস করে 
জলপাইতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং এন্টিইনফ্লেমেটরি   উপাদান প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহের ফলে বিভিন্ন ধরনের রোগ দেখা দিতে পারে, যেমন আথ্রাইটিস, ডায়াবেটিস এবং হৃদরোগ। নিয়মিত জলপাই খাওয়া প্রদাহ কমাতে এবং সংক্রমণ প্রতিরোধে কার্যকর। 

৫। ত্বক ও চুলের জন্য উপকারী
জলপাইয়ে থাকা ভিটামিন ই এবং অন্যান্য পুষ্টিকর উপাদান ত্বক ও চুলের জন্য খুবই উপকারী।  ভিটামিন ই ত্বকের আদ্রতা বজায় রাখে, ত্বকে মসৃণ ও কোমল রাখতে সাহায্য করে। এছাড়া চুলের স্বাস্থ্য উন্নত করতে এবং খুশকি প্রতিরোধ করতে জলপাইয়ের তেল ও কার্যকর ভূমিকা রাখে। 
৬। পরিপাকতন্ত্রের উন্নতি
জলপাইয়ের মধ্যে ফাইবারের পরিমাণ ভালো থাকায় এটি পরিপাকতন্ত্রের জন্য উপকারী। ফাইবার হজম শক্তির বৃদ্ধি করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে সাহায্য করে। পাশাপাশি এটি পাকস্থলের সুস্থতা বজায় রাখতে এবং গ্যাস্ট্রিক আলসার প্রতিরোধ করতে সহায়ক। 

৭। ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক
জলপাইয়ের মধ্যে থাকা পলিফেনাল এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক। এই উপাদানগুলো কোষের ডিএনএকে সুরক্ষিত রাখে এবং ক্ষতিকর কোষের বৃদ্ধি রোধ করে। বিশেষত স্তন, কোলন এবং পাকস্থলীর ক্যান্সার প্রতিরোধে জলপাই কার্যকর। 

৮। ওজন নিয়ন্ত্রণের সহায়ক
জলপাই কোম ক্যালরিযুক্ত এবং মনোআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট সমৃদ্ধ, যা শরীরের ফ্যাট বার্ন করতে সাহায্য করে। নিয়মিত জলপাই খেলে ক্ষুধা কমে এবং দীর্ঘ সময় পেট ভর্তি অনুভূত হয় যা ওজন নিয়ন্ত্রণের সহায়ক। 

৯। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
জলপাইয়ের থাকা ভিটামিন সি এবং অন্যান্য পুষ্টিকর উপাদান শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক। এটি শরীরে শ্বেত রক্তকণিকায় কার্যক্ষমতা বাড়ায়, যা সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। 

১০। মানুষের স্বাস্থ্যের উন্নতি
জলপাইয়ে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট মস্তিষ্কের কোষের সুরক্ষা নিশ্চিত করে এবং মানসিক চাপ কমাতে সহায়ক। নিয়মিত জলপাই খেয়ে স্মৃতিশক্তি বাড়ে এবং আলঝাইমার এর মতো রোগের ঝুঁকি কমে। 

জলপাই খাওয়ার নিয়ম 

জলপাই শীতকালে হয় তায়ে কি শীতকালীন ফলও বলা হয়। এই ফলটি কাঁচা অবস্থায় খাওয়া যায় এবং পেকে গেলেও খাওয়া যায়। এর পাশাপাশি ভর্তা করে আচার বানিয়ে এবং রান্না করেও খাওয়া যায় জলপাই। জলপাই খাবার ক্ষেতের পরিমাণ খুব গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন ৫-১০ তা জলপাই খাওয়া শরীরের জন্য পর্যাপ্ত। অতিরিক্ত খেলে বেশি ক্যালরি এবং সোডিয়াম গ্রহণের সম্ভাবনা থাকে। সাধারণত কাঁচা জলপাই তিতা এবং শক্ত থাকে, তাই সাধারণত প্যাকেট জাত জলপাই খাওয়া হয়, যেগুলো তেল বা লবণ পানিতে সংরক্ষিত থাকে। সেই ক্ষেত্রে কম লবণযুক্ত জলপাই খাওয়া ভালো কারণ অতিরিক্ত লবণ রক্তচাপ বাড়িয়ে দিতে পারে। 

আপনি আবার জলপাই একা একা খাওয়ার পাশাপাশি সালাতে, পাস্তা, স্যান্ডউইচ বা যে কোন রান্নায় মিশিয়ে খেতে পারেন। এতে সাত বাড়ি এবং আপনার খাবারের পুষ্টি কোন বৃদ্ধি পায়। আপনি সকাল ও দুপুরের খাবারের সাথে জলপাই খেতে পারেন এতে বেশি উপকার পাওয়া যায়। এছাড়া ঘুমানোর আগে খাওয়া এড়ানো উচিত কারণ এটা হজমে সমস্যা হতে পারে। 

জলপাইয়ের মধ্যে থাকা পুষ্টিগণ 

জলপাইয়ের মধ্যে রয়েছে পুষ্টিগুণের ভরপুর। জলপাই ফল ওষুধ হিসেবে কাজ করে বিভিন্ন অসুখ ছাড়াতে কাজ করে জলপাই যেমন পাকস্থলী, ক্ষুদ্রান্ত, কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। জলপাইয়ের মধ্যে থাকা পুষ্টিগুণী সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানিনা। সে ক্ষেত্রে চলুন জলপাইয়ের মধ্যে থাকা প্রচলন সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক। 

প্রতি ১০০ গ্রাম জলপাইয়ের মধ্যে:

শর্করা - ৩.৮৪ গ্রাম 
খাদ্য শক্তি -১৪৬ কিলোক্যালরি 
চিনি - ০.৫৪ গ্রাম 
খাদ্য আঁশ - ৩.৩ গ্রাম 
চর্বি -১৫.৩২ গ্রাম 
আমিষ - ১.০৩ গ্রাম 
ভিটামিন এ - ২০ আইইউ
বিটা ক্যারোটিন - ২৩১ আইইউ
থায়ামিন - ০.০২১ 
রিবোফ্লাবিন -০.০০৭ মিলিগ্রাম 
নিইসিন - ০.২৩৭ মিলিগ্রাম 
ভিটামিন বি৬ - ০.০৩১ মিলিগ্রাম 
ক্যালসিয়াম - ৫২ মিলিগ্রাম 
ফসফরাস - ৪ মিলিগ্রাম 
পটাশিয়াম - ৪২ মিলিগ্রাম 
ম্যাগনেসিয়াম -১১ মিলিগ্রাম 
ভিটামিন ই - ৩.৮১ মিলিগ্রাম 
আয়রন - ৩.১ মিলিগ্রাম 
জলপাইয়ের-মধ্যে-থাকা-পুষ্টিগণ

তাই বলা যায়, শরীর-স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য প্রতিদিন জলপাই খাওয়া উচিত। এতে করে শরীর সুস্থ সবল থাকে। তাই খাবার তালিকায় এই ফলটি প্রতিদিন রাখা উচিত। 

জলপাইয়ের আচারের উপকারিতা 

আমরা অনেকেই জলপাইয়ের আচার খাই কিন্তু এর উপকারিতা সম্পর্কে জানিনা। তো বন্ধুরা আপনাদের সুবিধার্থে নিচের অংশে জলপাই আচারের উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। চলুন জেনে নিই... 
  • হজমের উন্নতি: জলপাই আচারের প্রবায়োটিক উপাদান  সমৃদ্ধ থাকে যা অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়ক। এটিই হজম শক্তি বাড়ায় এবং গ্যাস্ট্রিক সমস্যার উপশম এর সহায়তা করে। 
  • অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ: জলপাইয়ের আচারে থাকে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যার শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ দূর করতে সাহায্য করে এবং ক্যান্সার প্রতিরোধে কার্যকারী ভূমিকা পালন করে। 
  • রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ: জলপাইয়ের আচার শরীরের রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে, কারণ এটি পটাশিয়াম এবং অন্যান্য উপকারী খনিজ সমৃদ্ধ। 
  • ত্বকের জন্য উপকারী: জলপাইয়ের ভিটামিন এ এবং অ্যান্টঅক্সিডেন্ট উপাদান ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে, ত্বককে সুস্থ রাখে এবং বার্ধক্যের লক্ষণ দূর করতে সহায়ক। 
  • হাড়ের স্বাস্থ্য রক্ষা: জলপাই থাকা ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাস হারের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়ক। নিয়মিত জলপাইয়ের আচার খেলে হাড় মজবুত থাকে এবং অস্টিওপোরোসিসের ঝুঁকি কমে। 
  • ওজন নিয়ন্ত্রণ: এতে ক্যালরি কম থাকে, ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হতে পারে। যারা ডায়েট করেছেন, তাদের জন্য এটি একটি সুস্বাদু এবং স্বাস্থ্যকর বিকল্প হতে পারে। 
তবে মনে রাখবেন যে জলপাইয়ের আচারে লবণ বেশি থাকে। অতিরিক্ত লবণ খাওয়া রক্তচাপ বাড়াতে পারে, তাই এটি সঠিক পরিমাণে খাওয়ায় স্বাস্থ্যকর। 

কাঁচা জলপাইয়ের পুষ্টিগুণ 

উপরে আমরা জেনেছি যেকোনো জলপাই খেলে কি কি উপকারিতা পাওয়া যায়। এখন আমরা জানবো কাঁচা জলপাই খেলে কি কি উপকারিতা পাওয়া যায় এবং এর পুষ্টিগুণ সম্পর্কে। কাঁচা জলপাই স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত পুষ্টিকর এবং উপকারী একটি ফল। এটি ফ্যাট, ভিটামিন এবং আন্টিঅক্সিডেন্ট এর সমৃদ্ধ উৎস, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এবং বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা দূর করতে সহায়ক। কাঁচা জলপাইয়ে প্রচুর পরিমাণে মনোআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট বা স্বাস্থ্যকর চর্বি থাকে যা হৃদরোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে এবং শরীরের খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে সহায়ক। 
এতে থাকা ওলেইক এসিড রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের ভূমিকা রাখে। এতে থাকা ভিটামিন এ চোখের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে এবং সংক্রমনের বিরুদ্ধে লড়াই সহায়ক। ভিটামিন কে-ও থাকে যার রক্ত জমাট বাঁধতে সহায়তা করে এবং হাড়ের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ। কাঁচা জলপায়ে আয়রন, ক্যালসিয়াম এবং কপারও রয়েছে, যা রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়ায় এবং হাড়কে শক্তিশালী করে। 

কাঁচা জলপায়ে ক্যালোরি কম এবং ফাইবার বেশি থাকে, যা ওজন নিয়ন্ত্রণের সহায়ক। ফাইবার খাবারের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে এবং হজমে সহায়তা করে, ফলে দীর্ঘক্ষণ ক্ষুদা লাগে না। এ কারণে যারা ওজন কমাতে চান, তাদের জন্য কাঁচা জলপাইকে আদর্শ খাবার। সব মিলিয়ে কাটা জল পাই তার পুষ্টিগুনে ভরপুর একটি ফল জানি নিয়মিত খাদ্য তালিকা অন্তর্ভুক্ত করলে শরীরের জন্য অনেক উপকার বয়ে আনতে পারে। 

গর্ভাবস্থায় জলপাই খাওয়া যাবে কি

গর্ভাবস্থায় মা-বোনদের অনেকের প্রশ্ন থাকে যে গর্ভাবস্থায় জলপাই খাওয়া যাবে কিনা। "হ্যাঁ" অবশ্যই গর্ভাবস্থায় জলপাই খাওয়া যাবে। গর্ভাবস্থায় জলপাই খাওয়া সাধারণত নিরাপদ এবং উপকারী। জলপায়ে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ই, আয়রন, ক্যালসিয়াম এবং স্বাস্থ্যকর ফ্যাট থাকে যা মায়ের স্বাস্থ্য এবং শিশুর বিকাশের জন্য উপকারী। স্বাস্থ্যকর ফ্যাট শিশু মস্তিষ্কের বিকাশের সাহায্য করে এবং আয়রন রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধে সহায়ক। জলপাইপুষ্টি গুণতায় ভরপুর তাই আপনি নির্দ্বিধায় গর্ভাবস্থায় জলপাই খেতে পারবেন।

গর্ভাবস্থায় জলপাই খাওয়ার উপকারিতা  

উপরে আমরা জলপাই খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জেনেছি কিন্তু গর্ভাবস্থায় জলপাই খেলে কি কি উপকারিতা পাওয়া যায় সেটা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়নি। এখন আলোচনা করা হবে গর্ভাবস্থায় জলপাই খেলে কি কি উপকারিতা পাওয়া যায়। গর্ভাবস্থায় জলপাই খাওয়া মায়ের স্বাস্থ্য এবং ভ্রুনের উন্নয়নের। এতে রয়েছে স্বাস্থ্যকর ফ্যাট বিশেষ করে মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড, যা গড় অবস্থায় শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। 
গর্ভাবস্থায়-জলপাই-খাওয়ার-উপকারিতা

জলপাইয়ের প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন রয়েছে যা কোষের ক্ষতি রোদে সহায়তা করে এবং মায়ের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এটি কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে, যা গর্ভাবস্থায় হৃদরোগের ঝুকি কমায়। জলপাই বিদ্যমান আয়রন রক্তের হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধি করে এবং গর্ভাবস্থায় অ্যানিমিয়া প্রতিরোধে কার্যকর। গর্ভাবস্থায় মা-বোনদের হজমে অনেক সমস্যা হয় এবং কোষ্ঠকাঠিন্যর অনেক সমস্যা হয়। জলপাই রয়েছে ফাইবার যা আপনার হজমের সহায়তা করবে এবং কষ্টকাঠিন্য কমাতে সাহায্য করবে। 

এছাড়াও জল পাইতে ক্যালসিয়াম এবং পটাশিয়াম থাকে যা আপনার এবং শিশুর হাড় ও দাঁতের গঠনে সহায়তা করবে। তবে গর্ভাবস্থায় পরিমিত পরিমাণে জলপাই খাওয়া উচিত। অতিরিক্ত লবণযুক্ত জলপাই পরিহার করা ভালো, কারণ এতে উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে। তাই গর্ভবতী মা-বোনদের  ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে জলপাই খাওয়া উচিত। 

সিদ্ধ জলপাইয়ের উপকারিতা 

সিদ্ধ জলপাই স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী একটি খাবার, কারণ এটি অনেক পুষ্টিগুনে সমৃদ্ধ। সিদ্ধ করার মাধ্যমে জলপায়ের কসভাব কমে যায়, যা এটি সহজে হজম হতে সহায়তা করে এবং এর পুষ্টিগুণ শরীরে ভালো হবে শোষিত হয়। নিচে সিদ্ধ জলপাইয়ের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ উপকারিত আলোচনা করা হলো :
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি: জলপাই ভিটামিন এ,সি,ই  প্রচুর পরিমাণে থাকে যার শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা রাখে । ভিটামিন সি জীবাণু প্রতিরোধ করে এবং ভিটামিন এ চোখ ও ত্বকের স্বাস্থ্য রক্ষায় সহায়ক। 
  • ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করে: জলপাই ইন্টঅক্সিডেন্ট উপাদান শরীরের কোষগুলোকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে যা ক্যান্সারে ঝুঁকি কমাতে সহায়ক। 
  • মানসিক চাপ র্যাস: সিদ্ধ জলপাই উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও স্বাস্থ্যকর ফ্যাট মানসিক চাপ কমাতে এবং মস্তিষ্ককে প্রশান্ত রাখতে সহায়ক। 
  • হাড়ের শক্তি বৃদ্ধি: সিদ্ধ জলপায়ে ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম থাকে যা হারকে শক্তিশালী করতে সহায়ক। এটি হাড়ের ঘনত্ব বাড়াতে এবং অস্ট্রিওপোরোসিসের ঝুকি কমাতে সহায়ক। 
  • রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ: সিদ্ধ জলপাই এমন উপাদান রয়েছে যা রক্তনালী প্রসারিত করতে সহায়ক, ফলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।  
সব মিলিয়ে, যুদ্ধ জলপাই একটি পুষ্টিকর স্বাস্থ্যকর খাবার যার শরীরের সামগ্রিক সুস্থতায় ভূমিকা পালন করে। তবে এটি পরিমিত মাত্রায় খাওয়া উচিত, কারণ অতিরিক্ত খেলে হজমের সমস্যা হতে পারে। 

জলপাই খাওয়ার অপকারিতা 

জলপাই একটি অত্যন্ত পুষ্টিকর ফল হিসেবে পরিচিত, তবে কিছু ক্ষেত্রে এটি খাওয়ার কারণে কিছু অপকারিতা হতে পারে। তবে এটি উল্লেখযোগ্য যে জলপাই সাধারণত নিরাপদ তবে অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া বা কিছু বিশেষ পরিস্থিতিতে এর কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হতে পারে। নিচে জলপাই খাওয়ার সম্ভাব্য ক্ষতিকারক প্রভাব বলে আলোচনা করা হলো:
সোডিয়াম(লবণ)  উচ্চতা
জলপাই সংরক্ষণের জন্য সাধারণত এটি লবণে ডুবিয়ে রাখা হয়। ফলে সংরক্ষিত জল পাইতে সোডিয়ামের মাত্রা অনেক বেশি থাকে, যা উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন রোগীদের জন্য ক্ষতিকর। বেশি লবণ খাওয়া হৃদরোগ, স্ট্রোক এবং কিডনির সমস্যার ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে। 

অম্লতা এবং হজম সমস্যা
জলপাইয়ের প্রাকৃতিক অম্ল ভাব রয়েছে, যা কিছু মানুষের জন্য হজমের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। বেশি পরিমাণ জলপাই খাওয়ার ফলে পাকস্থলীতে অম্লভাব বাড়তে পারে  এবং গ্যাস্ট্রিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। বিশেষত যাদের গ্যাস্ট্রিক এবং অ্যাসিডিটি সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য জলপাই খাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। 

এলার্জি ও ত্বকের সমস্যা
কিছু লোকের শরীরে জলপাইতে থাকা নির্দিষ্ট কিছু যৌগের প্রতি এলার্জি থাকে। এই ধরনের এলার্জি হলে ত্বকে চুলকানি, ফুসকুড়ি বা সর্দি-কাশির মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। এছাড়া ত্বকের জলপাইয়ের তেল ব্যবহারের ক্ষেত্রেও কারো কারো জন্য তার বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। 

ক্যালরি বৃদ্ধি
যদিও জলপাই একটি পুষ্টিকর ফল, তবে এতে থাকা ক্যালরির পরিমাণ তুলনামূলকভাবে বেশি। যাদের ওজন নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন তার অতিরিক্ত জলপাই খেলে ক্যালরি গ্রহণ বেড়ে যেতে পারে, যা ওজন বৃদ্ধির কারণ হতে পারে। সুতরাং, ওজন নিয়ন্ত্রণের জন্য বা ওজন কমানোর পরিকল্পনা থাকলে জলপাই খাওয়া সীমিত রাখা উচিত। 

লৌহা শোষণে বাধা
জলপাইয়ের মধ্যে থাকা কিছু রোগ ও শরীরের লৌহ শোষণে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষত যারা রক্তস্বল্পতা বা আয়রন ডেফিশিয়েন্সিতে ভুগছেন, তাদের জন্য অতিরিক্ত জলপাই খাওয়া লৌহ শোষণ প্রক্রিয়ার সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে এবং এর ফলে রক্তস্বল্পতা সমস্যা বাড়তে পারে। 

সব মিলিয়ে, জলপাই খাওয়ার কিছু অপকারিতা থাকলেও সঠিক পরিমাণে খেলে তার শরীরের জন্য উপকারী। তবে যারা উচ্চ রক্তচাপ, হজম সমস্যা বা এলার্জিতে ভুগছেন তাদের জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে জলপাই খাওয়া উচিত। 

শেষ কথা: জলপাই খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা-জলপাইয়ের পুষ্টিগুণ 

জলপাই খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে উপরে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে। আশা করছি আপনারা সম্পূর্ণ বুঝতে পেরেছেন। সব মিলিয়ে বলতে চাই যে, আপনি যদি আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে চান তবে আপনার খাদ্য তালিকায় প্রতিদিন জলপাই রাখুন। 

এতক্ষণ আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। গুরুত্বপূর্ণ এবং এরকম আর্টিকেল যদি আরো পড়তে চান তাহলে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইট ফলো করুন। আমরা আমাদের ওয়েবসাইটে নিয়মিত এধরনের আর্টিকেল প্রকাশ করে থাকি। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

জানার উপায় ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন।প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url