জমজমের পানি খাওয়ার উপকারিতা ও নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন
জমজমের পানি খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আপনি কি জানেন? আপনার কি জানা আছে জমজম পানি খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে? যদি না জেনে থাকেন আজকের আর্টিকেলটি আপনার জন্যই।
নিচে আরো আলোচনা করা হবে : জমজম পানির ইতিহাস, জমজম পানির বরকত ও ফজিলত, জমজম কূপ কোথায় অবস্থিত, জমজমের পানি কেন দাড়িয়া পান করতে হয়, জমজমের পানি খাওয়ার দোয়া, জমজমের পানি খেলে কি হয়, দমদমের পানি দিয়ে কি গোসল করা যায় ইত্যাদি।
পেজ সূচিপত্র ঃ জমজমের পানি খাওয়ার উপকারিতা ও নিয়ম
- জমজমের পানি খাওয়ার উপকারিতা
- জমজমের পানির ইতিহাস
- জমজম পানির বরকত ও ফজিলত
- জমজম কূপ কোথায় অবস্থিত
- জমজমের পানি পান করার নিয়ম
- রাসূল সা: যেভাবে জমজমের পানি পান করতেন
- জমজমের পানি কেন দাঁড়িয়ে পান করতে হয়
- জমজমের পানি খাওয়ার দোয়া
- জমজমের পানি খেলে কি হয়
- জমজমের পানি দিয়ে কি গোসল করা যায়
- জমজমের পানি সম্পর্কে হাদিস
- জমজমের পানির সাথে পানি মিশিয়ে খাওয়া
- শেষ কথা: জমজমের পানি খাওয়ার উপকারিতা ও নিয়ম
জমজমের পানি খাওয়ার উপকারিতা
জমজমের পানি ইসলামী বিশ্বাসী অনুযায়ী এক বিশেষ আশীর্বাদস্বরূপ। এটি মক্কার পবিত্র কাবা শরীফের নিকট অবস্থিত জমজম কূপ থেকে আহরিত হয়। মুসলিম ধর্মীয় রীতিতে জমজমের পানি পবিত্র এবং শারীরিক ও আধ্যাত্মিক উপকারিতা সম্পন্ন বলে বিশ্বাস করা হয়। নিচে জমজমের পানি পান করার কিছু উপকারিতা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:
- আধ্যাত্মিক শুদ্ধি: জমজমের পানি ইসলামী ঐতিহ্যে বিশেষ পবিত্রতা বহন করে। নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন "জমজমের পানি যা উদ্দেশ্য পান করা হয়, তাই পূর্ণ হয়"। এই বিশ্বাস অনুসারে, এটি আধ্যাত্মিক শুদ্ধি আনতে পারে এবং আত্মিক শান্তি প্রদান করে।
- শারীরিক উপকারিতা: জমজমের পানি প্রাকৃতিকভাবে খনিজ পদার্থের সমৃদ্ধ যা আপনার শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এতে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ খনিজ পদার্থ রয়েছে যা আপনার শরীরের শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে। গবেষণায় দেখা গেছে, জমজমের পানিতে ব্যাকটেরিয়া বা ক্ষতিকর জীবাণু নেই এবং এটি পানযোগ্য পানির মধ্যে অন্যতম বিশুদ্ধ।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি: রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক। এর উচ্চ মানের খনিজ উপাদান শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে, যা সাধারণ সর্দি, জ্বর বা অন্যান্য সংক্রমণের বিরুদ্ধে আপনাকে সুরক্ষা প্রদান করতে পারে।
- আত্মিক ও মানসিক প্রশান্তি: জমজমের পানি পান করার মাধ্যমে মুসলমানরা একটি গভীর আত্মিক প্রশান্তি লাভ করে। বিশেষ করে হজ বা উমরা পালন শেষে এটি পান করা এক ধরনের মানসিক প্রশান্তি ও তৃপ্তি প্রদান করে।
- বিশুদ্ধতার প্রতীক: জমজমের পানি বিশুদ্ধতার প্রতীক। এটি সারা বিশ্ব থেকে আগত মুসলমানদের জন্য একটি আধ্যাত্মিক সংযোগ তৈরি করে।
- প্রাকৃতিক নিরাময় ক্ষমতা: ইসলামী বর্ণনা অনুযায়ী, জমজমের পানিতে রোগনিরামের ক্ষমতা রয়েছে। অনেক মুসলিম এটি শারীরিক অসুস্থতা দূর করার উদ্দেশ্যে পান করে।
জমজমের পানি একটি বিশেষ আশীর্বাদ, যা শারীরিক, মানসিক এবং আধ্যাত্মিক উপকারিতার প্রদান করে। এটি শুধুমাত্র পবিত্রতার প্রতীক নয়, বরং স্বাস্থ্য এবং বিশ্বাসের এক অন্যতম উৎস। ইসলামে ঐতিহ্যে জমজমের তানি পান করা আল্লাহর রহমত এবং কৃপায় হিসেবে বিবেচিত হয়।
জমজমের পানির ইতিহাস
আমরা ইতিমধ্যে জমজমের পানি খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জেনেছি। কিন্তু এ জমজমের পানি কোথা থেকে এসেছে কিভাবে এসেছে এগুলো আমরা জানি না। তো চলুন জেনে নেওয়া যাক জমজমের পানির ইতিহাস সম্পর্কে। জমজমের পানি ইসলামি ইতিহাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং বিশেষ মর্যাদা পূর্ণ। এটি মক্কা শহরের পবিত্র কাবা শরীফের নিকটে, হাজরের মধ্যে অবস্থিত জমজম কূপ থেকে প্রাপ্ত পানি। জমজম কূপের ইতিহাস প্রাচীন সময় থেকে শুরু হয়ে ইসলাম ইতিহাসের একটি অঙ্গ হয়ে উঠেছে।
ইতিহাস অনুযায়ী, জমজম কূপের পানির শুরু হয় হযরত ইব্রাহিম (আ.) এবং তাঁর পুত্র হযরত ইসমাইল (আ.) এর সময় থেকে। একটি হাদিস অনুযায়ী, আল্লাহর আদেশে হযরত ইব্রাহিম (আ.) তার স্ত্রী হাজরাহ (আ.) এবং পুত্র হযরত ইসমাইল(আ.) কে মক্কা শহরের মরুভূমিতে রেখে আসেন। এ মরুভূমিতে পানি ছিল না, ফলে হযরাহ (আ.) তার পুত্র ইসমাইল (আ.) কে নিয়ে পানি খুঁজতে ছুটে চললেন। কিছু সময় পর আল্লাহর রহমতে ইসমাইল (আ.) এর পায়ের নিচে জমজম কূপের পানি ফুটে উঠতে থাকে। এই পানি ছিল অসাধারণ পবিত্র এবং পরিশুদ্ধ।
জমজম কূপের পানি তখন থেকে মানুষের জন্য পবিত্র এবং বরকতময় বলে বিবেচিত। হযরত ইসমাইল (আ.) এর সময় থেকেই এটি মুসলিমদের জন্য আশীর্বাদ এবং সংকটের সময় পানি প্রদানকারী উৎস হিসেবে পরিচিত। ইসলামে ঐতিহ্যে, জমজমের পানি পান করার সময় বিশেষ দোয়া পড়ার অভ্যাস রয়েছে এবং বহু মুসলিম জমজমের পানিতীর্থ যাত্রা, হজ বা ওমরা পালনের সময় সংগ্রহ করে।
জমজমের পানির বিশেষত্ব এর পবিত্রতা এবং সুনামিতার মধ্যে নিহিত। এটি এমন একটি প্রাণী যা হাজার বছর ধরে ফুরিয়ে যায়নি এবং যা সব সময় বিশুদ্ধ থাকে। আধুনিক বিজ্ঞান ও এ পানির বিশেষ গুনাগুন নিয়ে গবেষণা করেছে, তবে ইসলামে বিশ্বাস অনুযায়ী এটি আল্লাহর বিশেষ রহমত এবং সংকটকালে সাহায্যের একটি মাধ্যম। জমজমের পানি আজও মুসলমানদের মধ্যে অত্যন্ত প্রিয় এবং এটি ইসলামী সংস্কৃতির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে রয়ে গেছে।
জমজম পানির বরকত ও ফজিলত
জমজমের পানি পান করলে শুধু তৃষ্ণা মেটে না। ক্ষুধা দূর হয় এবং রোগ কমে। রাসুল (সা:) সর্বদা জমজমের পানি সাথে নিয়ে যান। তিনি জমজমের পানি পান করতে পছন্দ করতেন। রাসূল ও তার সাহাবীরা রোগ নিরাময়ের জন্য জমজমের পানি পান করতেন। জমজমের পানি ইসলামের ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং বরকতময় বলে বিবেচিত। জমজমের পানির বরকত ও ফজিলত কোরআন, হাদিস এবং ইসলামে ঐতিহ্য স্পষ্টভাবে উল্লেখিত।
জমজমের পানি সম্পর্কে একটি হাদিসে এসেছে" জমজমের পানি যার জন্য পান করা হয়, তা তার কামনা পূর্ণ করে"। (ইবনে মাজা) এই হাদিস দ্বারা বোঝানো হয়েছে যে, জমজমের পানি পান করার মাধ্যমে যেকোনো ব্যক্তি তার দোয়া ও চাহিদা পূর্ণ করতে সক্ষম হয়। এ পানি এমন এক বিশেষ গুণসম্পন্ন যে, এটি শুধু শারীরিক সুস্থতা বৃদ্ধি করে না বরং একজন মুমিনের দোয়া কবুল হতে সহায়ক হয়
জমজমের পানি সম্পর্কে আল-ইমাম-আল-নাওয়াওহী (রহ.) বলেন যে, এটি "শিফা" বা রোগের চিকিৎসায় সহায়ক। তাই মুসলিমরা সাধারণত এই প্রাণে রোগাক্রান্ত ব্যক্তিকে পান করানোর মাধ্যমে তাদের সুস্থতা কামনা করেন।
ইসলামে ঐতিহ্য জমজমের পানি বরকত নিয়ে বিশেষ আলোচনা হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো জমজমের পানি পিপাসা মেটানোর জন্য এক অনন্য পানীয়। আর উল্লেখযোগ্য যে এটি "মুবারক" বা পবিত্র বলে অভিহিত। সুতরাং জমজমের পানি শুধু একটি সাধারন পানিও নয় বরং এটি আল্লাহর অশেষ দয়া ও রহমতে প্রতীক।
জমজম কূপ কোথায় অবস্থিত
অবস্থান: মসজিদুল হারাম, মক্কা
অঞ্চল: প্রায় ৩০ মিটার (৯৮ ফুট) গভীর ও ১.০৮ থেকে ২.৬৬ মিটার (৩ ফুট ৭ ইঞ্চি থেকে ৮ ফুট ৯ ইঞ্চি)
প্রতিষ্ঠান কাল: ২০০০ খ্রিস্টাব্দের কাছাকাছি সময়।
জমজমের পানি পান করার নিয়ম
জমজমের পানি ইসলামের একটি বিশেষ পবিত্র পানি হিসেবে বিবেচিত। এটি মক্কা শহরের মসজিদুল হারামের ভেতরে অবস্থিত জমজম কূপ থেকে আহরণ করা হয় যা মুসলিমদের জন্য অত্যন্ত সম্মানিত। জমজমের পানি পান করার জন্য ইসলামী কিছু বিশেষ নিয়ম এবং সুন্নত রয়েছে, যা মুসলিমরা অনুসরণ করে থাকেন।
প্রথমত, জমজমের পানি পান করার আগে ও পরে বিসমিল্লাহ বলে পান করা সুন্নত। এটাই তাওহীদের প্রতি আস্থা ও ঈশ্বরের প্রতি শ্রদ্ধা প্রকাশের এক রূপ। পানি পান করার সময় ডান হাত ব্যবহার করা উচিত, কারণ ইসলামে ডান হাত ব্যবহার করাকে পরিশুদ্ধ ও সৌম্য হিসেবে গণ্য করা হয়। পানির প্রথম অংশে অবশ্যই তিনটি সিপ নেওয়ার জন্য, দাঁতের শরীর ও মন পরিষ্কার অপবিত্র থাকে। পানির প্রতিটি সিপের পর আলহামদুলিল্লাহ বলা সুন্নত, যাতে আল্লাহর শুকরিয়া প্রকাশ করা হয়।
এছাড়াও, কেউ জমজম পানি পান করার সময় কেবলামুখী হয়ে, আল্লাহর নাম স্মরণ করে, তিনটি শ্বাস নিয়ে এবং আনন্দের সাথে পানি পান করুন। জমজমের পানি পান করার সময় শরীরের অবস্থান ও গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত, বসে বা দাঁড়িয়ে পান করা যায়, সাধারণ পানি যেমন বসে পান করা উত্তম জমজমের পানি তেমন দাঁড়িয়ে পান করা উত্তম। পানি পান করার পর কিছু সময় দাঁড়িয়ে থাকা বা হাটাহাটি করা থেকে বিরত থাকা উচিত, কারণ এর ফলে পাকস্থলীতে চাপ পড়তে পারে।
হযরত ইবনে আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বর্ণনা করেন "এই জমজমের পানি পান করা কিবলামুখী হয়ে তিন নিঃশ্বাসের জন্য, বরকত ও উপকারের আশায় জমজমের পানি পান করার সময় এই দোয়াটি উচ্চারণ করা উত্তম।"
اللَّهُمَّ إِنِّى أَسْأَلُكَ عِلْمًا نَافِعًا, وَرِزْقًا وَاسِعًا, وَشِفَاءً مِنْ كُلِّ دَاءٍ
উচ্চারণ: "আল্লাহুম্মা ইন্নি আস'আলুকা ইলমান নাফিয়া, ওয়ারিজকান ওয়াসিয়া, ওয়াসিফান মিন কুল্লি দয়িন।"
অর্থ: "হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে কল্যাণকর জ্ঞান, প্রশস্ত রিজিক এবং সকল রোগ থেকে আরোগ্য লাভের জন্য দোয়া করছি।"
রাসূল সা: যেভাবে জমজমের পানি পান করতেন
জমজমের পানি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়িয়ে পান করতেন। তাই জমজমের পানি দাঁড়িয়ে পান করাকে উত্তম মনে করা হয়। তবে এভাবে জমজমের পানি পান করা জরুরি নয়।
স্বাভাবিক অবস্থায় অন্যান্য পানি দাঁড়িয়ে পান করাকে মাহরুহ তানজিহি বলা হয়। কারণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়িয়া পানি পান করাকে নিষেধ করেছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তার কিছু সাহাবীর পানি পান করা সম্পর্কিত হাদিস পাওয়া যায়। যার প্রমাণ করে দেয় দাঁড়িয়ে পান করা হারাম বা মাকরুহে তারমিহী নয়। তবে এটা শুধু জমজম পানি দাঁড়িয়ে খাওয়া যায় অন্যান্য সব পানি বসে থেকে খেতে হয়। হযরত ইবনে আব্বাস রা: থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জমজমের পানি দাঁড়িয়ে পান করেছেন (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং-২০২৭)।
জমজমের পানি কেন দাঁড়িয়ে পান করতে হয়
জমজমের পানি ইসলামিক পবিত্র বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলে বিবেচিত। দাঁড়িয়ে জমজমের পানি পান করার বিষয়ে ইসলামের হাদিসের নির্দেশনা রয়েছে, যা অনেক মুসলিম অনুসরণ করে। এর পেছনে ধর্মীয় এবং স্বাস্থ্য ও বিজ্ঞানভিত্তিক কিছু ব্যাখ্যা দেওয়া হয়।
হাদিসের নির্দেশনা:
ইসলামের নবী হযরত মুহাম্মদ(সা:) নিজে জমজমের পানি দাঁড়িয়ে পান করেছেন বলে উল্লেখ রয়েছে। হাদীসে ইবনে আব্বাস(রা:) বলেন:
"আমি নবী সা: কে দাঁড়িয়ে জমজমের পানি পান করতে দেখেছি। (সহীহ বুখারী: ১৬৩৭, সহীহ মুসলিম: ২০২৭)।
জমজমের পানি খাওয়ার দোয়া
ইবনে মাজাহ (রা:) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসলিম উম্মাহকে বলেছেন : পান করার পূর্বে আল্লাহর নাম পাঠ কর।
ইসলামের ইতিহাস অনুসারে, ইবনে আব্বাস (রা:) দমদমের পানি পান করার সময় এই দোয়াটি পাঠ করেছিলেন :
اللَّهُمَّ إِنِّى أَسْأَلُكَ عِلْمًا نَافِعًا, وَرِزْقًا وَاسِعًا, وَشِفَاءً مِنْ كُلِّ دَاءٍ
উচ্চারণ: "আল্লাহুম্মা ইন্নি আস'আলুকা ইলমান নাফিয়া, ওয়ারিজকান ওয়াসিয়া, ওয়াসিফান মিন কুল্লি দয়িন।"
অর্থ: "হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে কল্যাণকর জ্ঞান, প্রশস্ত রিজিক এবং সকল রোগ থেকে আরোগ্য লাভের জন্য দোয়া করছি।"
জমজমের পানি খাওয়ার সময় এই দোয়া করা সুন্নত, এবং নিজের ইচ্ছামতো আল্লাহর কাছে কোন দোয়া করা যেতে পারে। জমজমের পানি খাওয়ার সময় মনে করতে হবে যে, এটি বরকতময় পানি এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ নেয়ামত।
জমজমের পানি খেলে কি হয়
জমজমের পানি পৃথিবীর সবচেয়ে পবিত্র পানির মধ্যে একটি। জমজমের পানির বিশেষত্ব হলো এটি দীর্ঘকাল ধরে তার স্বাদ, গুনমান এবং বিশুদ্ধতা বজায় রাখে।
রমজানের পানি খাওয়ার সাথে কিছু ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক বিশ্বাস জড়িত। মুসলমানরা মনে করেন এটি শুধুমাত্র তৃষ্ণা মিটায় না, বরং বিভিন্ন শারীরিক ও মানসিক রোগ থেকে মুক্তি দেয়। হাদিসে বর্ণিত আছে, নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন জমজমের পানি যে উদ্দেশ্যে পান করা হয় তা পূরণ হয়। তাই অনেকে জমজমের পানি পান করার সময় দোয়া করেন বা সৎ উদ্দেশ্য মনে করেন।
বৈজ্ঞানিকভাবে, জমজমের পানিতে প্রচুর খনিজ উপাদান রয়েছে যা শরীরের জন্য উপকারী। এটি কোন জীবাণু দ্বারা দূষিত হয় না এবং দীর্ঘ সময় ধরে সংরক্ষণ যোগ্য। জমজমের পানির আরেকটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো, এটি এক ধরনের উচ্চ বিশুদ্ধ পানীয় যা শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
জমজমের পানি দিয়ে কি গোসল করা যায়
জমজমের পানি ইসলামের পবিত্র এবং বরকতম একটি উপাদান। জমজমের পানি পান করার জন্য নির্ধারিত এবং এটি শারীরিক ও আত্মিক আরোগ্য লাভের জন্য সুপরিচিত। জমজমের পানি দিয়ে গোসল করা শরীয়তের দৃষ্টিতে নিষিদ্ধ নয়, তবে এটি সাধারণত পান করার জন্য ব্যবহৃত হয়। ইসলামী ঐতিহ্য অনুযায়ী, জমজমের পানির মূল উদ্দেশ্য হলো তা পান করে আল্লাহর কাছ থেকে বরকত ও শিফা প্রার্থনা করা।
তাই গোসলের মত দৈনন্দিন কাজে এটি ব্যবহার করা কম প্রচলিত এবং কিছুটা শ্রদ্ধাবোধের অভাব হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। তবে যদি কেউ জমজমের পানি দিয়ে গোসল করতে চান, তবে সেটি করতে পারেন, বিশেষত যদি তা কোন বিশেষ ধর্মীয় উদ্দেশ্য বা রোগ মুক্তির আশায় হয়। তবে এটি করার সময় জমজমের পবিত্রতা এবং গুরুত্ব বিবেচনা করে যথাযথ শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা উচিত। পাশাপাশি, এটি সঠিকভাবে সংরক্ষণ এবং ব্যবহারের মাধ্যমে এর বরকত বজায় রাখা উচিত।
জমজমের পানি সম্পর্কে হাদিস
উপরে আমরা জমজমের পানি সম্পর্কে অনেক কিছু জেনেছি এখন আমরা জমজমের পানি সম্পর্কে হাদিস জানবো। প্রিয় নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জমজমের পানি সম্পর্কে বলেন:
"জমজমের পানি যে উদ্দেশ্যে পান করা হয় তা পূরণ হয়।"
এটি ইঙ্গিত করে যে, জমজমের পানি পান করার সময় যে নেক উদ্দেশ্য বা দোয়া করা হয় আল্লাহ তা কবুল করেন।
অন্য একটি হাদিসে নবী করীম (সা:) বলেছেন:
"জমজমের পানি উত্তম খাদ্য এবং অসুস্থতার জন্য আরোগ্য।"
জমজমের কূপ মক্কার মসজিদুল হারামের কাছে অবস্থিত এবং মুসলমানরা এটিকে বরকতময় ও শিফার উৎস হিসেবে গ্রহণ করে। জমজমের পানির বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো, এটি কখনো শুকিয়ে যায় না এবং এতে জীবাণুনাশক উপাদান থাকে। এটি ইসলামের ইতিহাসে হাজেরা (আ:) এর ত্যাগ ও আল্লাহর রহমতে এক মহান নিদর্শন।
জমজমের পানির সাথে পানি মিশিয়ে খাওয়া
জমজমের পানি মুসলিম বিশ্বে অত্যন্ত পবিত্র বরকতময় হিসেবে পরিচিত। মক্কার ঐতিহাসিক কূপের পানি সরাসরি পান করাই সুন্নত এবং তা মিশ্রণ ছাড়া খাওয়ার জন্য উৎসাহিত করা হয়। অনেক সময় জমজমের পানি অন্য পানির সাথে মিশিয়ে ব্যবহার করার প্রশ্ন ওঠে।
ইসলামী বিধান অনুযায়ী, জমজমের পানি মূলত স্বকীয় পবিত্রতার কারণে আলাদা। তবে, যদি জমজমের পানি মিশিয়ে ব্যবহার করা হয় তাহলে তা মূল জমজমের পানির ফজিলত ধরে রাখে কিনা, তা নিয়ে আলেমদের মধ্যে কিছুটা ভিন্ন মত রয়েছে। কেউ কেউ বলেন, জমজমের পানি যেহেতু বরকত ময়, তাই মিশ্রণ সত্ত্বেও তা পবিত্র থেকে যায়। তবে এর পূর্ণ ফজিলত পেতে জমজমের পানি সরাসরি পান করা উত্তম।
প্রত্যেক ব্যক্তির উদ্দেশ্য ও ব্যবহারের পদ্ধতি এখানে গুরুত্বপূর্ণ। যদি মিশ্রণ করার মূল উদ্দেশ্য হয় জমজমের পবিত্রতা ছড়ানো, তবে তা গ্রহণযোগ্য হতে পারে। তবে সঠিক সিদ্ধান্তের জন্য বিশেষজ্ঞ আলেমদের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত। জমজমের পানির প্রতি সম্মান ও তার পবিত্রতা বজায় রাখা আমাদের সবার দায়িত্ব।
শেষ কথা: জমজমের পানি খাওয়ার উপকারিতা ও নিয়ম
জমজমের পানি খাওয়ার উপকারিতা ও নিয়ম সম্পর্কে উপরে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি আপনারা সব জানতে পেরেছেন। এতক্ষণ আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। গুরুত্বপূর্ণ এবং এরকম আর্টিকেল যদি আরো পড়তে চান তাহলে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইট ফলো করুন। আমরা আমাদের ওয়েবসাইটে নিয়মিত এই ধরনের আর্টিকেল প্রকাশ করে থাকি।
জানার উপায় ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন।প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url